রাজশাহীতে তিনস্তরের ছকে ভোটের নিরাপত্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রথম ধাপে রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় তফসিল হলেও নির্বাচন হবে আটিিটতে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে পবা উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে না। বাকি আট উপজেলায় একযোগে ৫২২টি কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহন করা হবে। এর মধ্যে ২২২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার কথা জানিয়েছেন পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তারা। পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যের পাশাপাশি নিরাপত্তায় থাকবে বিজিবি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়।’’
তিনি বলেন, রাজশাহীর আট উপজেলায় প্রার্থী রয়েছে ৬৯ জন। এর মধ্যে চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ফলে ৬৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বি করছেন। এর মধ্যে ছয়টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, ছয়টি উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন এবং আটটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১ জন। বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এবং গোদাগাড়ী ও মোহনপুর উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘‘উপজেলা নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নিরাপত্তা ছাড়াও থাকছে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা পুলিশের প্রায় দুই হাজার সদস্য।’’
তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেলে জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে নির্বাচনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ। এ সময় তিনি নির্বাচনে শতভাগ নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।’’
রাজশাহী বিজিবি-১ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে নির্বাচনের নিরাপত্তার জন্য তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল শুরু করেছে। ভোটের দিন ২০ থেকে ২৫ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে।
সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, আট উপজেলায় ৫২২টি ভোটকেন্দ্র মধ্যে ২২২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র ধরে নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৫ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্বে থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রে থাকবে ১৩ জন।
গোদাগাড়ী উপজেলায় ৯৪ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ, তানোরে ৫১ কেন্দ্রে মধ্যে ২৮টি, বাগমারায় ১০৬টির মধ্যে ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়াও দুর্গাপুরের ৫৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি, পুঠিয়ায় ৬৩ ভোটকেন্দ্রের ৩৪টি, চারঘাটে ৫২টির মধ্যে ২৮টি, মোহনপুরের ৪৪টির মধ্যে ২৩টি এবং বাঘা উপজেলার ৫৯ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সদ্য ওয়ার্কার্স পাটিতে যোগ দেয়া শরীফুল ইসলাম।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে লড়ছেন ছয়জন প্রার্থী। এরা হলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবু বাক্কার, আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, সাদেকুল ইসলাম ও সোহেল রানা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সোনিয়া সরদার ও বন্দনা রানী প্রামানিক।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। এরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনিত উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান, জাতীয় পার্টি নেতা সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস ও ওয়ার্কার্স পাটির সাইদুর রহমান।
এ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সুফিয়া খাতুন মিলি। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে এখানে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী। এরা হলেন, আব্দুল মালেক, তৌহিদুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, সফিকুল ইসলাম সরকার, সালমান ফিরোজ সরকার।
চারঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফকরুল ইসলাম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীয় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টিপু সুলতান ও জাতীয় পার্টি থেকে লড়ছেন ইকবাল হোসেন।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন নয়জন। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আহম্মেদ আবু সিনা চাঁদ, কাজী ফিরোজ আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া, মাজদার রহমান, অসিম কুমার ঘোষ ও রোকনুজ্জামান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন জামেলা বেগম, তাজমিয়া খাতুন ও পারভীন আরা।
বাগমারা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলটির জেলার সহ-সভাপতি অনিল সরকার। তার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বাবুল হোসেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে লড়ছেন তিন নারী। এরা হলেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ও সহসভাপতি শাহাদত হোসেন সাগর এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল আক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ আক্তার বেবী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী শাহিনুর খাতুন।
দুর্গাপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বিপরীতে ভোটের মাঠে লড়ছেন একই দলের দুইজন প্রার্থী। এরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ সরদার এবং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন প্রার্থী। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনয় কুমার, আব্দুল মোতালেব, বেলাল হোসেন ও রেজাউল করিম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বানেছা বেগম, সাহিদা বিবি, জলিদা বেগম ও সারমিন আহম্মেদ।
পুঠিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত জিএম হিরা বাচ্চু ও জাতীয় পার্টির আনসার আলী। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুল মতিন মুকুল ও জামাল উদ্দিন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে আকলিমা বেগম, পরিজান বেগম, মতিয়া হক ও মৌসুমী রহমান।
বাঘা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু। তবে ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী। এরা হলেন, আনোয়ার হোসেন মিল্টন, আব্দুল মোকাদ্দেস ও শাহিন আলম এবং ফাতেমা খাতুন ও রিজিয়া আজিজ সরকার।
মোহনপুর চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এ্যাডভোকেট আব্দুল সালাম। এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সানজিদা রহমান রিক্তা নির্বাচিত হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ উপজেলায়। এরা হলেন, মেহবুব হাসান রাসেল, মহাসিন আলী, মোর্তজা আলী, সামসুল অলম ও সুরঞ্জিত সরকার।
ভোটার সংখ্যা
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, গোদাগাড়ী উপজেলায় ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৩৪ জন, তানোরে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৩ জন, বাগমারায় দুই লাখ ৭৮ হাজার ১৪ জন, পুঠিয়ায় এক লাখ ৬০ হাজার ৭২৪ জন, দুর্গাপুরে এক লাখ ৪১ হাজার ১০৫ জন, চারঘাটে এক লাখ ৫৯ হাজার ৭২৫ জন, মোহনপুরে এক লাখ ২৯ হাজার ২৪৮ জন এবং বাঘা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৩ জন।
No comments