Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    ডিজিটাল প্রতারণার শীর্ষে মোবাইল ব্যাংকিং






    রাজশাহী নিউজ ডেস্ক  : কম সময়ে লেনদেনের মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। দ্রুত টাকা প্রাপ্তি ও পাঠানোর সুযোগ করে দিচ্ছে এই ব্যাংকিং পদ্ধতি। তবে প্রযুক্তিনির্ভর এ মাধ্যমটির নিরাপত্তা দিন দিন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেক গ্রাহক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল প্রতারণার শীর্ষে আছে মোবাইল ব্যাংকিং।
    প্রযুক্তিগত সুবিধার অপব্যবহার করে ১৮টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের প্রতারিত করতে গড়ে উঠেছে বিশাল প্রতারকচক্র। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ৩৭৪ জনকে এরইমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশের ৬৩৩টি থানায় প্রতিদিন গড়ে অন্তত দু’টি করে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ছে। বর্তমানে এ ধরনের মামলার সংখ্যা রয়েছে ১৩৫টি।
    নিরক্ষর ব্যক্তিরা মোবাইল ব্যাংকিং বেশি ব্যবহার করলেও প্রতারিতদের প্রায় সবাই শিক্ষিত গ্রাহক বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
    গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনার পাশাপাশি অপরাধ কর্মকাণ্ডের অর্থ লেনদেনেও ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। এই ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত এজেন্টের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময় ২৭ জন এজেন্ট গ্রেফতারও হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
    বেশি প্রতারিত হন ঢাকা বিভাগের গ্রাহকরা
    মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ঢাকা বিভাগে। দেশের মোট গ্রাহকের ২৪ শতাংশই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। ১৮ শতাংশ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। বাকি গ্রাহকরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হয় ঢাকা বিভাগে। আর প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশই ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও কুমিল্লার বাসিন্দা।
    ১৫ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের অর্থ লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং
    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বলছে, অপরাধীরা অর্থ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে মোবাইল ব্যাংকি। ১৫ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের অর্থ লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার চিহ্নিত করা হয়েছে। তথ্য বলছে- মাদক ব্যবসা, মানবপাচার, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ, হুন্ডি, জালিয়াতি, জিনের বাদশা, হ্যালো পার্টি, প্রতারণা, মুক্তিপণ আদায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রবাসীদের জিম্মি করে টাকা আদায় ও ধর্মভিত্তিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধের ঘটনায় টাকা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং।
    মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতারণা ধরতে কাজ করে যারা
    থানা পুলিশ ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতারণা ও অবৈধ লেনদেন চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে পাঁচটি ইউনিট। এই ইউনিটগুলো হলোÍ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
    এজেন্টদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
    গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করতে প্রতারকচক্র সবসময়ই তৎপর থাকে। আর হুন্ডি, মাদক ও চোরাচালানের অর্থ লেনদেনে জড়িত রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টরা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বিকাশ, রকেটসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত দুই হাজার ৮৮৮ জন এজেন্টের একটি তালিকা সিআইডির কাছে পাঠায়। তাদের অস্বাভাবিক লেনদেন খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করে বিএফআইইউ। সেখান থেকে সিআইডি অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনকারী ২৫ বিকাশ এজেন্টকে চিহ্নিত করে। পরে তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযানও চালায় সিআইডি। গত বছরের জানুয়ারিতে সিআইডি’র অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ১১ জন এজেন্ট। সিআইডি ছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে বিভিন্ন সময় আরও ১৬ জন এজেন্ট গ্রেফতার হয়। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে রাজধানীর ডেমরা থেকে বিকাশের তিন এজেন্ট গ্রেপ্তারের ঘটনা ছিল আলোচিত। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৩০০ মোবাইল সিম, ৯০০ ছবি ও ৮৫০টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতো বলে সেসময় জানিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য
    ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘লোভ বা সুযোগের কথা বলে প্রতারকরা গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’ অধিকাংশ গ্রাহকই সঠিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং বোঝেন না বলে জানান তিনি। মাসুদুর রহমান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী টাকা লেনদেন করছেন না মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা। তারা গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণে সচেতন না। এজেন্টদের কাছ থেকেই মূলত গ্রাহকের নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারকরা।
    পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি মূলত প্রযুক্তিনির্ভর। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবার সঙ্গে জড়িত- প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব। গ্রাহকদের অভিযোগ পেলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলে। পাশাপাশি গ্রাহকের অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।’
    মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য
    মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা আগের চেয়ে অনেক কমেছে বলে দাবি করেছেন দেশের শীর্ষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম। তিনি জানান, প্রতারণার হাত থেকে গ্রাহকদের বাঁচাতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে বিকাশ। ডালিম বলেন, ‘মূল কথা হলো, গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। যদি কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়েই যান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমার কেয়ারে জানাতে হবে।’
    মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
    মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয় গত বছরের মার্চে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছয় কোটি এক লাখ ৫২ হাজার। তবে নিবন্ধিত গ্রাহকদের মধ্যে অনেকের হিসাবই সক্রিয় নেই। সক্রিয় গ্রাহক দুই কোটি দুই লাখ ৬২ হাজার। এসব গ্রাহক প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১১ কোটি টাকা লেনদেন করেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্ট সংখ্যা আট লাখ চার হাজার ৬১০ জন। মোবাইল ব্যাংকিং প্রথম শুরু করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। তবে কিছুটা পরে শুরু করেও সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেনের ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার আছে।
    বিআইবিএম’র গবেষণা
    বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা জরিপ অনুযায়ী, নিরক্ষর মানুষরাই মোবাইল ব্যাংকিং বেশি ব্যবহার করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে কম শিক্ষিত থেকে বেশি শিক্ষিত মানুষেরা ব্যবহার করেন মোবাইল ব্যাংকিং। জরিপের তথ্য বলছে, ২১ দশমিক সাত শতাংশ নিরক্ষর মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন। এরপর প্রাথমিক পাস মানুষ ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মাধ্যমিক পাস ১৮ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক ১৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন।
    প্রসঙ্গত, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরের বছর পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করে মোবাইল সেবা চালু হয়। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট হলো প্রথম অনুমতি পাওয়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728