বাঘায় বিয়ের বয়স মানছেনা নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায় সচেতনতা নেই জন্ম নিয়ন্ত্রনের স্থায়ী পদ্ধতিতেও
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি ঃ
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ে জন্ম ১৩ বছরের চাঁদনীর। কিছু বুঝে উঠার আগেই গত বছর বিয়ে হয়েছে নিজ গ্রামের উজ্জলের সঙ্গে। স্বামীর সংস্পর্শে হয়তো হবে সন্তানের জননী। বিয়ের আগে চাঁদনী জানতোনা প্রজনন স্বাস্থ্য বয়সন্ধিকাল কি। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।
শনিবার (৭-৯-১৯) উপজেলার দিঘা গ্রামের গিয়ে দেখা হল চাঁদনীর বাবা জেমন্স এর সাথে। সে জানায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের অনেকেই খাবার বড়ির উপর নির্ভরশীল হলেও স্থায়ী পদ্ধতি নিতে আগ্রহী নন তারা । ওই গ্রামের শুধু চাঁদনী কিংবা তার বাবাই নন,গ্রামের নারি পুরুষ অনেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রনের স্থায়ী পদ্ধতি সর্ম্পকে সচেতন নন। যার কারণে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি সম্প্রায়ের অনেক মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে অল্প বয়সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল ,উপজেলায় প্রায় শতাধিক পরিবার আছে, যাদের মধ্যে শিক্ষা ও সচেনতার অভাবে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহনে অনীহা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়মিত বাড়ি ভিজিট না করাসহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবার গুলো। তবে সরকারি- বেসরকারীভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুললে বন্ধ হবে বাল্য বিয়ে। জন্ম নিয়ন্ত্রনের স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহনে আগ্রাহী হলে হ্রাস পাবে জনসংখ্যাও।
পাশের গ্রামের ১ সন্তানের জননী শিরিনা বেগম জানান, কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও বয়সন্ধিকাল সম্পর্কে জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি । সরকারের পাশাপাশি বাঘা উপজেলার সচেতন ব্যক্তিরা যদি এ নিয়ে কাজ করে তাহলে শরীর স্বাস্থ্য সচেতন হবে। কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য ও বয়সন্ধিকাল সম্পর্কে জানাতে হবে। মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী লাইলাতুল জাহান লাকি জানান, শিক্ষা জীবনে শারীরিক শিক্ষা প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে উঠান বৈঠক জরুরী । জনসংখ্যা বিষয়ক প্রচার প্রচারনা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে। এনজিগুলো কাজ করলে এখানকার মানুষ আরো বেশী সচেতন হবে।
ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির নেতা অনিল পাহাড়িয়া বলেন আমরাও সুযোগ চাই,যদি আমাদের সুযোগ দেয় তাহলে আমরা ও শিক্ষা - দিক্ষায় এগিয়ে যাব।
বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক বলেন,শিক্ষা দিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে এ সম্প্রদায়ের লোকজন। যার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পারেনি তাদের সন্তনেরা। এ সম্প্রদায়ের হাতে গোনা কয়েকজন শিশু স্কুলে যায়। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে প্রাথমিকের গন্ডি পার হয়ে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে লেখাপড়ায় এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের মোট জন গোষ্ঠির একটি অংশ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠিরা। এরাও এক সময় মা হবে। প্রজনন ও বয়সন্ধিকাল সম্পর্কে যদি আগে থেকেই তাদের সচেতন করা হয়,তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস পাবে ভবিষ্যতেও নিরাপদে থাকবে ।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার রাফিউন নাহার বলেন, পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা নিয়মিত বাড়ি পরিদর্শন করে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। এ উপজেলায় অনুমোদিত পরিবার কল্যান সহকারী ও পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা অনেক পদ শুন্য থাকায় বেশ সংকটের মধ্যে আছি। তবুও আমাদের এই স্বল্প লোকবল দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের পাশাপাশি এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে আরো ভালো হয়।
তিনি জানান, উপজেলায় সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৪২হাজার ২ শত ২৮ জন, আই ইউডি গ্রহীতার শতকরা ০.৯৬ % খাবার বড়ি ৩১.০৭ % কনডম ১৪.৮৫% ইনজেকশন ১৮.১৮% ইমপ্ল্যান্ট ৩.১০% মহিলা ও পুরুষ স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহন ১২%। মোট পদ্ধতি গ্রহনকারীর হার ৮০.৩০%। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৮৩ জন। পুরুষ ৯২ হাজার ১০জন, মহিলা ৯২ হাজার ১৭৩ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি সম্প্রদয়ের অনেকেই স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহনে আগ্রহী হচ্ছেনা। বিশেষতঃ স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতিগুলোর অনিয়মিত ব্যবহারের কারণে অনাকাঙ্কিত গর্ভধারণের মত ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। তাই প্রজনন স্বাস্থ্য ও আধুনিক পরিবার পরিকল্পনায় অংশ গ্রহন, দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহন, মাসিক নিয়মিতকরণ,গর্ভপাত ও প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবায় নারী, নবদম্পতি ও কিশোরিদের প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রয়েছে।

No comments