Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    চারঘাটে কৃষকদের ফসলী জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় !


    আব্দুল মতিন, চারঘাট:
    ফসলি জমির মাটির কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে এসব মাটি কিনে ইট তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়া ও নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা হারিয়ে কৃষি জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এতে জমিতে ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

    যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষকদের লোভে ফেলে ফসলী জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে।

    উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলায় মোট ১০টি ইটভাটা থাকলেও এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ২টি ইটভাটার। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে তিন ফসলী জমির ভেতর অধিকাংশ ইটভাটাগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

    উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চারঘাটে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে ৪ থেকে থেকে ৬/৭ একর জমির প্রয়োজন হয়। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শত শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেঁটে নেওয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

    জানা যায়, ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েলসহ জমির মাটি একবার কেঁটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। ফলে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

    উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হচ্ছে। এতে ঐসব এলাকার ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে।

    ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজন কৃষক জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়। উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় অযুহাত দেখিয়ে সহজ-সরল কৃষকদের ম্যানেজ করে দালালরা ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে কিনে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে যে জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে তা অনেক কৃষকই জানেন না।

    আবার অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার ক্ষতি পোষাতে তাদের ফসলী জমি থেকে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।

    নিমপাড়া ইউনিয়নের কৈ ডাঙা গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, প্রতিবছরই আবাদ করে ফসল ফলিয়ে লোকসান গুনতে হয়। বাজারে ধানের দাম থাকেনা। তাই ইটভাটায় ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছি।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটা মালিক বলেন, যেসব কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করতে চায় আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে মাটির দর দাম ঠিক করে সে মাটি কিনে আনি।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুনজুর রহমান বলেন, জমির মাটি বিক্রি করলে জমির উৎপাদন শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।এতে কৃষির উপরে একটা বড় প্রভাব পড়বে। এজন্য কৃষকদের তাদের ফসলী জমির মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।##

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728