সচেতনতার অভাবে চারঘাটে বাড়ছে বন্যপ্রাণী হত্যা !
আব্দুল মতিন, চারঘাট:
পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণী সবই পরিবেশের অংশ। তারপরও সচেতনতার অভাবে বাড়ছে বন্যপ্রাণী হত্যা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রতি বছর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। সচেতনতা না থাকায় তারা দলবেঁধে দিনক্ষণ ঠিক করে বন্যপ্রাণী হত্যায় মেতে উঠে।
প্রতি বছরই এভাবে নির্বিচারে বন্যপ্রাণী হত্যা করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা মনে করেন, বন্যপ্রাণী হত্যা কোনো অপরাধ নয়। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনে শাস্তিও হয় না। তবে সচেতনরা মনে করছেন, ‘একমাত্র সচেতনতাই পারে বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে।’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর নবম অধ্যায়ের (অপরাধ ও দণ্ড) ৩৬ ও ৩৭ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি, হরিণ, লাম চিতা, উল্লুক, কুমির ও ঘড়িয়াল ইত্যাদি হত্যার অপরাধ করলে আইনের ৩৬ ধারায় দণ্ড সর্বনিম্ন ২ বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড, আর অর্থদণ্ড সর্বনিম্ন ১ লাখ ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলা সদরের চক গঁওরা গ্রামে গত শুক্রবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন দলবেঁধে তীর-ধনুক দিয়ে গম ক্ষেত থেকে তিনটি বেজি ও একটি বন বিড়াল হত্যা করে। শিকারীরা সবাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচ্ছনতা কর্মী হিসাবে কাজ করেন। মাঝে মধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বন্যপ্রাণী শিকার করতে দেখা যায় তাদের। এ সময় বন্যপ্রাণী হত্যার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান স্থানীয় সংগঠন ' পিএফজি' এর সদস্যরা। এ সময় শিকারীদের থামানো হয় এবং বন্যপ্রাণী হত্যা আইন সম্পর্কে বোঝানো হয়। বন্যপ্রাণী শিকারী আদিবাসী এলিসন,সষ্ঠী, সুজিত বলেন, আসলে এটা আমাদের ঐতিহ্যগত অভ্যাস। বন্যপ্রাণী হত্যার বিষয়ে যে আইন হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। যেহেতু বন্যপ্রাণী হত্যা একটি আইনত অপরাধ। আগামীতে আমরা এ হত্যা আর করব না।
এ বিষয়ে সংগঠন 'পিএফজি' এর জেলা সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, পরিবেশ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে প্রাণীকূল। আমাদের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেক প্রাণীকূল আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমান সভ্য যুগেও একটি গোষ্ঠী ঐতিহ্য রক্ষায় নির্মম নিষ্ঠুরভাবে প্রাণী হত্যা করে চলেছে। এর বিরুদ্ধে আইন থাকলেও বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে শাস্তি পেতে হয় না। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হুমকির মুখে পড়বে প্রাণিজগৎ। কালক্ষেপণ না করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা সামিরা বলেন, আদিবাসীরা মনে করেন এটা তাদের বংশপরম্পরায় একটা সংস্কৃতি। তবে বন্যপ্রানী হত্যা করা অন্যায়। যেহেতু তারা এসব বিষয় জানে না। আগামীতে তারা যেন বন্যপ্রাণী হত্যা না করে, এজন্য যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে সচেতনতামুলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তারপরেও যদি তারা আইন অমান্য করে, তবে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

No comments