চারঘাটে বাল্যবিবাহ বাড়ছে,বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই
চারঘাট-প্রতিনিধি : রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সাদীপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম গত ২২ শে মার্চ ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া তাঁর মেয়ের (১৪) বিয়ের আয়োজন করেন। খবর পেয়ে চারঘাট মডেল থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসলে তারা দুই পক্ষ ফের বিয়ের উদ্যোগ নেন। বর-কনেকে তাঁরা পার্শ্ববর্তী গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে সেই দিনই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ের (১২) বিয়ে হয় গত বছরের ২৫ শে অক্টোবর। সে স্থানীয় বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীতে পড়তো। কোনো সমস্যা যেন না হয়, সেজন্য মাঝরাতে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।যদিও বিয়ের এক মাসেই যৌতুকের টাকা নিয়ে কলহ সৃষ্টি হয়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।বিয়ে রেজিস্টার না হওয়ার কারনে মেয়ে পক্ষ কোথাও অভিযোগ করারও সাহস পাইনি।পাত্র পক্ষ তাদের ছেলেকে নতুন আরেকটি বিয়ে করিয়েছে,সেটাও হয়েছে বাল্যবিবাহ।
এভাবে চলতি বছর এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাল্যবিবাহ হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় বাল্যবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং একাধিক জনপ্রতিনিধি এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চারঘাটে বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা এসিডি। সংস্থাটির এক সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ইউসুফপুর ও শলুয়া ইউনিয়নে তাদের সংস্থা কাজ করে। ২০১৮ সালে এ দুই ইউনিয়নে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ৬৯ টি।আর ২০১৯ সালের গত তিন মাসে বাল্য বিবাহ সংগঠিত হয়েছে ২২টি।
এ বিষয়ে এসিডির প্রকল্প সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল বলেন, চলতি বছরের গত তিন মাসে বাল্যবিবাহ বেড়েছে, তাতে এ দুই ইউনিয়নে ২০১৮ সালের হিসাবকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।আমাদের পরিসংখ্যানের বাইরেও একাধিক বিয়ে হয়ে থাকে,যেগুলোর তথ্য আমরা পাইনা।
এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তা বা বেসরকারি সংস্থার আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এটি প্রতিরোধে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিও তেমন ভূমিকা পালন করছেন না।
চারঘাট উপজেলায় দীর্ঘদিন যাবত বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজ করছেন সাইফুল ইসলাম বাদশা।তিনি বাল্য বিবাহ প্রতিনিয়ত বাড়ার কারন সম্পর্কে বলেন,স্থানীয় প্রশাসন বাল্য বিবাহ ঠেকানোর জন্য পুলিশ পাঠানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ,কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই । বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোনো দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি।আর এ কারনে অভিভাবকদের মাঝে বাল্যবিবাহ দেওয়ার সময় কোনো ভীতি কাজ করে না।
তিনি বলেন, বাল্য বিবাহের সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করলে কিংবা বাল্য বিবাহ সংক্রান্ত ঘটনায় মামলা হলে, অভিভাবকদের কাছে সেটা উদাহরন তৈরি হতো।তারা বুঝতো বাল্যবিবাহ দিলে শাস্তি পেতে হয়।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতার কাছে ৭ টি বাল্য বিবাহ সংক্রান্ত ঘটনায় নথিপত্র জমা দেওয়া আছে।তিনি মামলা করবেন,অথবা ব্যবস্থা নেবেন বললেও সেটা আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ।এভাবে চলতে থাকলে বাল্যবিবাহ কখনই কমবে না।
এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন,আমরা অধিকাংশ সময় গোপনে বাল্যবিবাহ হয়ে গেলে তারপর সংবাদ পাই।এসব বাল্যবিবাহের ঘটনাগুলো চিন্হিত করে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।তদন্ত শেষে সত্যতা যাচাই করে ধারাবাহিক ভাবে মামলা করা হবে।

No comments