চারঘাট বড়ালে আবারও অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট:
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বড়াল নদী। এই নদীর মাছ বিক্রি করেই চলতো দু’পাড়ের জেলে পরিবারগুলোর সংসার। কিন্তু এখন তারা অসহায় ও দিনাতিপাত জীবনযাপন করছেন। এর কারণ কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার বড়ালের উৎস মুখ থেকে অনুপামপুর ও মুংলি হয়ে কালুহাটি পর্যন্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পুরো এলাকাজুড়ে বাঁশের বেড়া, জালসহ বিভিন্নভাবে বাঁধ দিয়ে জবরদখল করে মাছ চাষ করছে। আর এদের মদদদাতা হিসাবে রয়েছে একজন ইউপি চেয়ারম্যান।
আর এ অবৈধ কাজটি দীর্ঘ দিন যাবৎ করতে থাকলেও এলাকার কেউ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কিছুদিন আগে একাধিক গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ নাজমুল হকের নেতৃত্বে চারঘাট উপজেলাধীন বড়াল নদীতে দিনভর অভিযান পরিচালনা করে সকল অবৈধ বাধ ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু স¤প্রতি আবারও নতুন করে বাধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে।
এছাড়াও কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে নদীর দু’পাশে পাউবোর অর্ধশতক জমিতে অবৈধভাবে তোলা হয়েছে অর্ধশতাধিক দোকানঘর। ওই জায়গা ইজারার নামে একটি চক্র ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চারঘাট উপজেলাধীন বড়াল নদীর পুরো অংশকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে জবরদখল করে নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন কয়েকজন ব্যাক্তি।
তারা মাছ চাষের জন্য নদীটির বিভিন্ন স্থানে জাল ও বাঁশের বেড়াসহ শক্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বাঁধ দিয়েছেন। এগুলোর কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি চলাচলে বিঘœতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিন্ধকতার কারণে নানা স্থানে আটকে রয়েছে কচুরিপানা ও আবর্জনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুপামপুর এলাকার এক জেলে বলেন, ক্ষমতার দাপটে এক ইউপি চেয়ারম্যানের মদদে নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয়রা। এই নদীর ওপর ভর করেই আমার বাপ-দাদা থেকে শুরু করে আমারও সংসার চলতো। কিন্তু সেই নদীতে এখন জাল ফেলার অধিকার আমাদের নেই। তাই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় নিজেকে জড়ানো চেষ্টা করছি। জনগুরুত্বপূর্ণ এই নদী দখলমুক্ত করতে গ্রামবাসীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দাবি জানিয়ে এলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
চারঘাট উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, মৎস্য আইন ভেঙে মাছ চাষ করায় বড়াল নদীর সাধারণ প্রবাহ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হবার উপক্রম। এজন্য উপজেলা মৎস অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সামিরা বলেন, নদী কারো ব্যাক্তিগত সম্পদ নয়। বিষয়টা তদন্ত করে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

No comments