আমের রাজ্যে এবার হতাশার ছায়া, বাঘা-চারঘাটে দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে বাগান মালিকরা !
![]() |
আমের রাজ্যে এবার হতাশার ছায়া, বাঘা-চারঘাটে দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে বাগান মালিকরা |
নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী (বাঘা-চারঘাট):
রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট অঞ্চল দেশের আমের রাজধানী নামে পরিচিত। প্রতিবছর এই মৌসুমে আমকে ঘিরে জমে ওঠে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। গাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে আম নামানো, প্যাকিং, পরিবহন, সবখানেই দেখা যায় কর্মচাঞ্চল্য। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা আলাদা। আমের ভালো ফলন হলেও বাজারে তার মূল্য নেই, যার ফলে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন গভীর সংকটে।
সাধারণত প্রতিবছর রাজশাহী থেকে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টন আম রপ্তানি হয়। কিন্তু এবছর এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম রপ্তানি করা যায়নি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার কমে যাওয়া, বৈরী আবহাওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমের রপ্তানি অনুমতির জটিলতা।
চারঘাট উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, আমি নিজে ৫-৬ বিঘার ওপর বাগান করেছি। এবং কিছু বাগান কিনা রয়েছে যা গত বছর প্রায় ১০-১৫ মেট্রিক টন আম ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি। এবার কিছু আম পাঠাতে পেরেছি। স্থানীয় বাজারে দাম এত কম যে খরচ উঠছে না।
লখনা: ৫০০-৫৫০ টাকা/মণ ,গত বছর ছিল ৯০০ টাকা হিমসাগর ,ক্ষিরশাপাত, ১৪০০-১৬০০ টাকা/মণ ,গত বছর ছিল ৩৫০০-৪০০০ টাকা ,ন্যাংড়া: ১৩০০-১৪০০ টাকা/মণ ,গত বছর ছিল ৩০০০-৩৫০০ টাকা, আম্রপালি: ১৫০০-১৮০০ টাকা/মণ ,গত বছর ছিল ৩৫০০-৪০০০ টাকা, ফজলি: ৬০০-৮০০ টাকা/মণ ,গত বছর ছিল ২০০০-২২০০ টাকা ,প্রসঙ্গত, এবার এক মণ আম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ কেজিতে, যেখানে পূর্বে ছিল ৪৫ কেজিতে।
বাগান মালিকরা জানান, গড়ে ১ বিঘা জমিতে ৪৫-৫০ মণ আম হয়। প্রতিটি বিঘায় খরচ হয় প্রায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা। তিনবার স্প্রে, আগাছা পরিষ্কার, জাল টানানো, আম নামানো, প্যাকিং ও পরিবহন খরচ সব মিলে হিসাবটা ভারী হয়ে যায়।
একজন শ্রমিক গড়ে ৫–৮ মণ আম নামাতে পারেন। দিনে খাবারসহ মজুরি দিতে হয় ৫০০ টাকা। একটি ২৫ কেজি ঝুড়ি ট্রাকে তুলতে ১৫ টাকা, দড়ি ও মোড়ানোর কাগজে ৬ টাকা, কুরিয়ারে পাঠাতে কেজি প্রতি ১৩–১৬ টাকা, ভ্যান ভাড়া মণপ্রতি ১০–২০ টাকা, প্লাস্টিক ক্যারেট ২২৫ টাকা, কার্টুন ৭০–৮০ টাকা।
চারঘাট উপজেলার কৃষক হাসানুজ্জামান বলেন, এভাবে লোকসান হলে আগামীতে আর আম চাষ করতেই ইচ্ছা করবে না। দুঃখের বিষয়, কেউ আম নিতে চায় না। অনেক গাছেই আম পেকে ঝরে পড়ছে।
আড়ানী রামচন্দ্রপুর তরুণ উদ্যোক্তা রাজু আহমেদ নামে এক ব্যাক্তি অনলাইন পেজ চালু করে আম বিক্রি শুরু করেছিলেন। প্রথমদিকে হিমসাগরের ভালো চাহিদা থাকলেও এখন অর্ডার একেবারে নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, “শুরুতে প্রতিদিন ১০ মণ করে হিমসাগর পাঠাতাম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। এখন ১ মণও যাচ্ছে না।
তবে আমের সঙ্গে যুক্ত কুলি, পরিবহন ও প্যাকিং সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের আয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। প্রতিদিন একজন শ্রমিক গড়ে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছে। মৌসুমজুড়ে এভাবেই আয় হয়।
কৃষিবিদ ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মতে,বৈরী আবহাওয়া বসন্তে বৃষ্টির অভাব, পরে অতিরিক্ত গরমে ফলন একসাথে পেকে যাওয়া,অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার ফলন বৃদ্ধির জন্য নিয়ন্ত্রণহীন স্প্রে,অনলাইন বিক্রিতে অস্থিরতা ও ক্রেতা কমে যাওয়া।
আম শুধু রাজশাহীর ফল নয়,বাঘা-চারঘাট অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার এই মৌসুমি চাষের ওপর নির্ভর করে। দরপতনের এই ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে অনেকেই আম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।#
No comments