Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    চারঘাটে চুরি করতে গিয়ে ধরা খেল হাসিব ১৫ দিন জেলেও শুধরাল না, মায়ের চোখে এখন শুধুই লজ্জা আর কান্না!

     

    হাসিব শুধু চোর নয়—সে একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত

    নিজস্ব প্রতিবেদক,(চারঘাট, রাজশাহী):

    রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের পুটিমারী, জোতরঘু ,গুয়াবাড়ী গ্রামের আকাশে এখন আর আগের সেই নির্ভরতার আলো নেই। কারণ, প্রতিদিন রাতে কোনো না কোনো গাছে হাত পড়ছে চোরের, হারিয়ে যাচ্ছে বাড়ির ডাব, কলা, আম। দিনের আলোয় মুখে মুখে শুধু একটাই নাম—হাসিব।

    এলাকার মানুষ তাকে এক সময় ছোট ভাইয়ের মতোই দেখত। কেউ ভাবেনি যে সে একদিন হয়ে উঠবে ভয় আর বিরক্তির প্রতিচ্ছবি। কিন্তু বাস্তবতা বারবার তারই বিপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে।

    বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে, জোতরঘু গ্রামের এক গাছে ডাব চুরি করতে উঠে পড়ে হাসিব। গাছের নিচে শব্দ শুনে এগিয়ে আসেন গাছ মালিকের চাচাতো ভাই আদম আলী, তাকিয়ে দেখেন গাছের মাথায় এক চোর! আর সেই চোর কেউ নয়, তাদের চেনা হাসিব। মুহূর্তেই এলাকাবাসী ছুটে আসে, গাছ থেকে নামিয়ে তাকে গাছের সাথেই বেঁধে রাখে।



    এই প্রথম নয় এগর আগেও বহুবার এমনভাবে ধরা পড়েছে সে। একবার আম চুরি, একবার কলা, একবার ভাঙা ঘরের চালা থেকে কিছু সরিয়ে নিয়েছে। কখনো হাতেনাতে ধরা পড়ে, কখনো পালিয়ে বাঁচে। কিন্তু প্রতিবারই সমাজ, প্রতিবেশী কিংবা পরিবার তাকে ক্ষমা করেছে একটা ‘শেষ সুযোগ’ দিয়েছে।


    এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তার আলী আক্ষেপ করে বলেন,আমরা তাকে নিজের সন্তান ভেবেই বারবার ক্ষমা করেছি। কিন্তু ও শোনে না। ওর কাছে দয়া, কান্না, অনুরোধ কিছুই গুরুত্ব পায় না। নেশা আর চুরি এখন ওর নেশায় পরিণত হয়েছে।


    হাসিব শুধু চোর নয়—সে একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত। গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা—যা পাওয়া যায়, তাই তার নেশা। এই নেশা এখন শুধু হাসিবকে না, গ্রাস করে ফেলেছে তার পরিবারকেও।


    তার স্ত্রী গৃহকর্মী। অন্যের বাসায় কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। ছোট্ট একটা মেয়ে আছে, যার স্বপ্নটা প্রতিদিনই ভাঙে বাবার অপকর্মে। এমনকি হাসিবের মা যিনি অনেক আগেই অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান ,সেই তিনিও ছেলের খারাপ অবস্থার কথা শুনে এবার নিজেই এসে দাঁড়ান প্রশাসনের দরজায়।

    তাঁর কণ্ঠ কেঁপে উঠেছিল যখন বলেছিলেন,আমি ঈদের আগে নিজেই ইউএনও অফিসে গেছিলাম। বলেছিলাম, আমার ছেলেকে জেলে রাখেন। আমি আর পারছি না। ও নিজেরে না, আমাদেরও শেষ করে দিচ্ছে।”


    হাসিবকে তখন ১৫ দিনের জন্য জেল হাজতে রাখা হয়। মা ভেবেছিলেন, হয়তো এবার সে বুঝবে, শুধরাবে। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে সে আবার আগের মতোই—নেশা, চুরি আর মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে ভরে ওঠা জীবন।

    চুরির পরও এলাকাবাসী আবারও রাগকে জয়ের পথে না টেনে, আবারও তাকে ছাড় দেয়। হাসিবকে মারধর না করে গাছের সাথেই বেঁধে কিছুক্ষণ রাখে, তারপর তার স্ত্রী ও পরিবারের হাতে তুলে দেয়—আরও একবার শুধরানোর সুযোগ দিয়ে।


    স্থানীয় শিপন আলী বলেন,মেয়ে আছে একটা ছোট। ছেলেটা যদি ফিরে আসে স্বাভাবিক জীবনে, এজন্যই মারিনি। পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি।

    তবে এলাকায় ক্ষোভও কম নেই। এক যুবক মতিউর রহমান বলেন,বারবার সুযোগ দিলে এরা উৎসাহ পায়। আজ হাসিব, কাল আরও দশজন। এবার সময় এসেছে আইন প্রয়োগের।

    এই ঘটনা কেবল হাসিবের নয় এটি এক হাজার হাসিবের গল্প। সমাজে নেশা, বেকারত্ব, পারিবারিক ভাঙন আর অসচেতনতার ফাঁদে পড়ে আমাদের অনেক তরুণ আজ এই পথে হাঁটছে। প্রতিবারই কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দেয় মা, স্ত্রী, প্রতিবেশী কিংবা সমাজ। কিন্তু সেই হাত ধরার আগেই তারা পিছিয়ে যায়, ডুবে যায় অন্ধকারে।

    শেষমেশ, একটি পরিবার হারায় সন্তান, একজন মা হারায় আশার আলো, আর একটি ছোট মেয়ে হারায় নিরাপদ ভবিষ্যৎ।


    এখন আর সহানুভূতির সময় নয়। এখন সময় কঠোর সিদ্ধান্তের, আইন প্রয়োগের, সচেতনতার। এ সমাজকে বাঁচাতে হলে এই প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতেই হবে আলোয়।#




    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728