Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    চারঘাট-বাঘায় স্বস্তির বৃষ্টি,দাবদাহের অবসানে জনজীবনে প্রাণের ছোঁয়া !

     

    চারঘাট-বাঘায় স্বস্তির বৃষ্টি



    নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী (চারঘাট-বাঘা):

    টানা কয়েক সপ্তাহের ভ্যাপসা গরমে পুড়ছিল রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার প্রতিটি জনপদ। কোথাও কোনো বাতাস ছিল না, ছিল না এক ফোঁটা বৃষ্টির দেখা। দিনের বেলা রাস্তায় মানুষের দেখা মেলা ছিল দুষ্কর। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে রাতেও ছিল না স্বস্তির ঘুম। গরম যেন মানুষের দম বন্ধ করে দিচ্ছিল।


    তবে মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টার পর থেকে হঠাৎ করেই বদলে যায় আকাশের রং। কালো মেঘে ঢেকে যায় চারদিক। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, আর সেই বৃষ্টিই পরে রূপ নেয় স্বস্তিদায়ক ভারী বর্ষণে। বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শীতল হাওয়া আর একটানা বৃষ্টিতে যেন নতুন জীবন ফিরে পায় জনপদ।


    চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের চাষি আবদুল কুদ্দুস বলেন,

    গত দুই সপ্তাহ ধরে জমিতে পানি দিচ্ছিলাম সেচ দিয়ে। খরচ হচ্ছিল বেশি। মাটি শুকিয়ে যাচ্ছিল। এই বৃষ্টি ধানের জমির জন্য দারুণ উপকারী। এখন আমরা স্বাভাবিকভাবে চারা রোপণ করতে পারব।


    বাঘা উপজেলার রুস্তমপুর এলাকার তরুণ কৃষক শামীম হোসেন বলেন,

    সকালেই ভাবছিলাম আর এক সপ্তাহ এমন চললে হয়তো আমন চাষ পিছিয়ে যাবে। দুপুরের দিকে আকাশ দেখে মনে আশার আলো জেগেছিল, আর দুপুর ১২টার পর থেকেই বৃষ্টি নামল, তখন মনে হলো প্রকৃতি আমাদের কথা শুনছে।


    পুঠিমারী এলাকার গৃহবধূ নাছিমা বেগম বলেন,

    গত ক’দিন চুলার সামনে দাঁড়ানো দায় হয়ে গিয়েছিল। ফ্যান চলত না, বাতাসও ছিল না। ছোট বাচ্চারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না। এখন ঠান্ডা হাওয়া লাগছে, ঘরের ভেতরে শান্তি লাগছে।


    আড়ানী বাজারের রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন,

    দিনে রাস্তায় রিকশা চালানো যাচ্ছিল না। গরমে ঘামেই শরীর ভিজে যেত। মাথা ঘুরতো। আজকে মনে হচ্ছে শরীরটা হালকা হয়ে গেছে।


    রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে,

    মঙ্গলবার রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে চারঘাট ও বাঘায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৪°C বাতাসে আদ্রতা ছিল ৭৮% দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে আগামী ৩-৪ দিন থেমে থেমে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।


    আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা জানান,

    মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং কৃষি খাতও উপকৃত হবে।


    টানা দাবদাহে রাজশাহীর গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। চারঘাট ও বাঘা উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছিল। তবে আজ বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুৎচাপ হ্রাস পায় এবং সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কয়েকটি এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া গেছে।


    বাঘার আড়ানী বাজার, রুস্তমপুর হাট, এবং চারঘাটের পুঠিমারী ও ডাকরা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে—বৃষ্টির পরে একটু ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানুষজন বের হয়েছেন বাজারে। সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে দেখা গেছে খানিকটা ভিড়।


    আড়ানী ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন,

    গত ক’দিন দোকানে বসে থাকতাম, গরমে কেউ আসতো না। আজ বৃষ্টি শেষে বিকেলে ক্রেতা ছিল বেশ। কিছু বিক্রিও হয়েছে।


    প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত চারঘাট ও বাঘাবাসীর কাছে আজকের এই বৃষ্টি যেন ছিল ঈদের মতো আনন্দের। কৃষক, শ্রমিক, শিশু, নারী—সবার মুখে ফিরে এসেছে হাঁসি। রাস্তায় রিকশাচালকরা আবার ছুটে চলেছে, মাঠে কৃষক নেমেছেন হাসিমুখে, ঘরে ফিরেছে শান্তির ঘুম।


    প্রকৃতির এই আশীর্বাদে মানুষ প্রার্থনা করছে এই শান্তিটুকু যেন আরও কিছুদিন থাকে ।#


    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728