বাঘায় নতুন কমিটিতে পদ পেতে নেতাদের দৌড়ঝাপ! দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি বিএনপি।
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
রাজশাহীর বাঘায় গত দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি বিএনপি। পূনাঙ্গ নতুন কমিটি গঠনে কয়েক দফায় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৭ সালের জুন মাসে গঠন করা ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট ওই আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে আবারো আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষনা দিয়েছে দলটি। বর্তমানে এই কমিটির উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এ কারণে আগের কমিটি বিলুপ্ত করে শিগগির আহ্বাযক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ,যুগ্ন আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ঘোষনা দিয়েছেন। নতুন গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে বলে দলের পক্ষ থেকে এমন কথা জানানো হয়েছে। আর নতুন কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ করার পাশাপাশি জোর চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির আগ্রহী নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটিতে সভাপতি হতে চাইছেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সভাপতি,সাবেক ছাত্র নেতা প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন, বর্তমান কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক ও সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক, যুগ্ন আহ্বায়ক ও সাবেক সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চাদসহ আরও দুই-একজন সিনিয়র নেতা। সাধারণ সম্পাদক হতে চাইছেন দলের যুগ্ন আহ্বায়ক ও যুবদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, আরেক যুগ্ন আহ্বায়ক ও যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক মুখলেচুর রহমান মুকুল, পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক সুরুজ্জামান সুরুজসহ আরো কয়েকজন।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন 'আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সব সময় মাঠে থেকেছি। যদি আমাকে সভাপতি পদে দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে হলেও আমি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করব। নুরুজ্জামান খান মানিক বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দলের দুঃসময়ে সক্রিয়ভাবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এবারেও আমাকে যোগ্য মনে করে যদি দায়িত্ব দেয় তাহলে আমি তাদের সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব। সাইফুল ইসলাম বলেন,নেতা-কর্মীরা চাইলে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো।
যুগ্ন আহ্বায়ক প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'দলকে সুন্দর ও শক্তিশালী করতে হলে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। দলের দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিলেন তাদের প্রাধান্য দিতে হবে। যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোখলেচুর রহমান মুকুল বলেন, 'আগে ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন বিএনপি করি। 'আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সবসময় মাঠে থেকেছি। তাই চাই, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেই যেন বাঘা উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি করা হয়। সুরুজ্জামান বলেন, দলে সক্রিয় থেকে পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই থেকে দলের নেতা কর্মীদের কাছ থেকে মূল্যায়ন পাবো। এভাবে আরও কয়েক পদপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা অভিন্ন মতামত প্রকাশ করেন।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুজ্জামান খান মানিক,সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম চাদ। আগের সেই কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৭ সালের ৫জুন বাঘা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় বযেজুল ইসরাম খান আহ্বায়ক ও আশা ফু উদ দোলাকে সদস্য সচিব করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি’র বাঘা উপজেলার মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে এ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বহিস্কৃত,দলত্যাগ করে ফিরে আসা ও যুবদলের নেতারা স্থান পেলেও বাদ পড়েন বিএনপির মূলধারার ত্যাগী নেতারা। একই বছরের ১১ অক্টোবর (১১-১০-১৭) সেই সময়ের জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু ও সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মুন্টুর যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বয়েজুল ইসলাম খানকে বাদ দিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন কে আহবায়ক করা হয়।
পূর্বের আহবায়ক কমিটিতে স্বপদে বহাল থাকে যুগ্ন-আহবায়ক ও সদস্যবৃন্দ। পাশাপশি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অরাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে বিএনপির বাঘা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকেও দলের সকল পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত দুই বছরেও দলটিতে গতি নেই। দলের কর্মসূচি নিয়ে কয়েক জন নেতাকে মাঠে দেখা গেলেও বেশিরভাগই ছিল নিষক্রিয়।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে পূণাঙ্গ কমিটি গঠনে হিমশিম খেতে হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের পছন্দের পাত্রদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ পাইয়ে দিয়ে নিজেদের গ্রুপ শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনে রূপরেখা তৈরি করেছে রাজশাহী জেলা কমিটির নেতারা। নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি ঘোষণা দেবেন তারা। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে বাঘা উপজেলা ও বাঘা পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাদ।

No comments